স্টাফ রিপোর্টার: কেশবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি মামলায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাতে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে।

তবে, মামলায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেনসহ অন্য আসামিরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো আলতাপোল গ্রামের মৃত মোশাররফ বিশ্বাসের ছেলে জাহিদ হাসান টুটুল (২৮) এবং একই গ্রামের আলতাফ হোসেন বিশ্বাসের ছেলে সোহান হোসেন (২৭)। ইতিপূর্বে সোহানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মারমারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার কায়েমখোলা গ্রামের আতোষ গাজীর ছেলে বাচ্চু রহমান (২৯) এর সাথে কেশবপুর পৌরশহর এলাকার পরিচয় দানকারী অজ্ঞাতনামা এক মেয়ের মোবাইল ফোনে কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওই মেয়ে বাচ্চুকে বিভিন্ন সময় নানান স্থানে দেখা করার কথা বলে এবং বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রলোভন দেখায়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা মেয়ে গত ৭ মার্চ সকালে বাচ্চুর মোবাইলে ফোন করে জরুরীভাবে কেশবপুর থানার আলিয়া মাদ্রাসার পার্শ্বে দেখা করতে বলে। তখন বাচ্চু উক্ত স্থানে গেলে ওই মেয়ে পৌর শহরের সাবদিয়া হাজী ইসমাইল মোড়ল সড়কের জনৈক জিল্লুর রহমানের বসত বাড়ির তলায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর সকল আসামীরা অজ্ঞাতনামা মেয়েসহ বাচ্চুর বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি তোলার হুমকি-ধামকি দেয়। ওইসময় আসামীদের কাছে বাচ্চুকে রেখে মেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তখন আসামীরা পরস্পর বাচ্চুকে বিভিন্ন প্রকার হুমকী প্রদান করে তার মোবাইল ফোন, ব্যবহৃত সিম, গলায় থাকা ১৪ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন কেড়ে নেয় এবং ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় আসামীরা এলোপাতাড়িভাবে বাচ্চুকে কিলঘুষি মেরে মারপিট করে। মারপিটের একপর্যায়ে বাচ্চু ২’লক্ষ টাকা তাদের দিতে স্বীকার করেন। তখন বাচ্চু মনিরামপুর থানার চালকিডাঙ্গা বাজারে গিয়ে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিবে বলে জানান। পরবর্তীতে কাউন্সিলর কবির হোসেনের নির্দেশে টুটুল ও সোহান টাকা নেওয়ার জন্য বাচ্চুকে সাথে নিয়ে একটি প্রাইভেটকারযোগে সেখানে যায়। তখন বাচ্চু মহাজন আনোয়ার হোসেনের কাছে ১লক্ষ টাকা চাইলে তার নিকট নগত টাকা না থাকায় নিজ নামীয় আল আরাফা ব্যাংকের ১ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করে। পরবর্তীতে বাচ্চু আসামীদের সাথে নিয়ে মনিরামপুর আল আরাফা ব্যাংক থেকে নগদ ১লক্ষ টাকা উত্তোলন করে তাদের নিকট প্রদান করে। এরপর আরও ১লক্ষ টাকা দাবি করলে বাচ্চু তার বন্ধু রকিবুল হাসানের কাচ থেকে বিকাশ ও নগত এর মাধ্যমে ৫০ হাজার এবং আরেক বন্ধু ইব্রাহিমের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা সর্বমোট ১লক্ষ টাকা প্রদান করলে আসামীরা পুনরায় বাচ্চুকে প্রাইভেটকারযোগে কেশবপুর ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। এরপর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে কাউন্সিলর কবির হোসেনের নির্দেশক্রমে বিষয়টি কাউকে কিছু না জানানোর ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করে বাচ্চুকে ছেড়ে দেয়।

পরবর্তীতে বাচ্চু ঘটনা উল্লেখ করে, পৌর শহরের আলতাপোল গ্রামের মৃত মোশাররফ বিশ্বাসের ছেলে জাহিদ হাসান টুটুল (২৮) এবং একই গ্রামের আলতাফ হোসেন বিশ্বাসের ছেলে সোহান হোসেন (২৭), বায়সা গ্রামের লুৎফর রহমান এর নাতনী সামি (২৫), একই গ্রামের মাহাবুরের ছেলে ইমরান (২৫), হাকিমের ছেলে শাহিন (২৮), দবির উদ্দীনের ছেলে কাউন্সিলর কবির হোসেন (২৮) ও সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার হামিদ সরদারের ছেলে মিলন হোসেনের (৩০) নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামি করে নিজেই বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-৫। ওই মামলায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।

এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল আলম বলেন, চাঁদাবাজি মামলায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সোহানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজি মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের শুক্রবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলায় পলাতক পৌর কাউন্সিলর কবির হোসেনসহ সকল আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিমুক্তসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড রুখতে থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। অপরাধী যেই হোক-না কেন তাদের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।